রোজার পারিশ্রমিক : আশিকুর রহমান

নিয়ম হলো শ্রমিক যখন কাজ শেষ করবে তখন তার পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়া। রমজান মাসও ঠিক তেমন বান্দা যখন রোজা রাখে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে তখন আল্লাহ তা'আলা তার প্রতিদান রমজান মাস শেষ হলে দেন। ঠিক যেই ভাবে শ্রমিকের কাজ শেষ হওয়ার পর তারপর পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।

কিন্তু রমজান মাসের পারিশ্রমের যে প্রাপ্য তা আমরা নিতে রাজি না। মনে করুন—শ্রমিক কাজ শেষ করেছে এখন মালিক তাকে তার পারিশ্রমিক দিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে কিন্তু শ্রমিক উধাও হয়ে গেল সে কাজ ছেড়ে চলে গেলে বাড়িতে। অথবা খেল তামাশায় লিপ্ত হয়েছে অথবা ঘুরাঘুরি করার জন্য কোথাও চলে গেল তখন কি মালিক তার পারিশ্রমিক দিবে?

যদি না দেয় তাহলে আপনি বলুন তো মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের কিভাবে পারিশ্রমিক দিবেন যেখানে আমরা পারিশ্রমিক নেওয়ার সময় হলে বিভিন্ন নাফরমানির কাজে লিপ্ত হয়ে যাই। কি করি না?

আমাদের অবস্থাটা এমন যে আমাদের ইফতার শেষ মানে আমাদের নামাজ রোজা ইবাদত সবকিছুই শেষ। আমরা শেষ ইফতারটা করে মাগরিবের নামাজ টা আদায় করি ঠিকই কিন্তু এশারের নামাজের আর মসজিদে মুসল্লী পাওয়া যায় না হাতেগোনা কয়েকজন ব্যতীত। আর ঈদের দিনের কথা তো বাদই দিলাম। ইদের দিন হল গুনাহ মাফের দিন ঐদিন আমরা অধিকাংশ মানুষই ফজরের নামাজ পড়তে পারি না কেননা সারারাত তো জেগে ছিলাম কেউ হয়তো ইদের শপিং করতে আর কেউ হয়তো বিভিন্ন হেয়ার কাট দিতে আর কেউ গান-বাজনায় বাজি পটকা ফোটানোর জন্য। সারারাত সজাগ থেকে আমরা ফজরের কিছুক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়ি যার ফলে ফজরের নামাজ পড়াই হয় না এমনকি অনেকের ইদের নামাজ পড়া হয়না। এখন আপনার হয়তো বলবেন এমনটা হওয়া পসিবল নয়। আরে ভাই আমার নিজের চোখেই দেখা আমাদের এলাকার যুবক ভাইদের অবস্থা। তারা সারা রাত আনন্দ উল্লাসে কাটায় অথচ তাদের কপালে ঈদের নামাজ পড়ার সৌভাগ্যই হয় না। সেখানে কীভাবে আশা করতে পারেন ফজরের নামাজ পড়া হয়েছে তাদের। তারা একেকজন ঘুমিয়ে থাকে গভীর ঘুমে।

হযরত আবু উমামা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামান বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে সওয়াব প্রাপ্তির নিয়তে ইবাদত করবে তার হৃদয় সেদিনও জীবিত থাকবে যেদিন সকল হৃদয়ের মৃত্যু ঘটবে। 

           (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৭৮২)

বর্তমানে আমাদের অবস্থা এমন, যেখানে আমরা রাত জেগে সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ইবাদত করবো সেই জায়গায় আমরা জাগ্রত থাকি ঠিকই কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ইবাদত করার মাধ্যমে না বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার নাফরমানির কাজের মধ্যে লিপ্তের মাধ্যমে। 

অনেকের জুয়া খেলার মাধ্যমে রাত উদযাপন করে। কত নির্লজ্জ হলে তারা এই টাকা দিয়ে ঈদের শপিং করে? কীভাবে আপনি ক্ষমা পেতে পারেন? যেখানে হারাম টাকা দিয়ে নিজের কাপড় চোপড় কেনা? কীভাবে আপনি শিওর হলেন আপনাকে ক্ষমা করা হবে? কীভাবে আপনি শিওর হলেন আপনাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে যেখানে আপনি সুদে, কিস্তিতে টাকা তুলে সেই টাকা দিয়ে খাবার খাচ্ছেন ,পোশাক পরিধান করছেন?

আমি আপনাদেরকে একটি কথা বলি আপনারা এই কাজগুলো থেকে বিরত থেকে ইদের রাত্রিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার জন্য ইবাদতের মাধ্যমে কাটিয়ে দিন দেখবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আপনাকে অবশ্যই মাফ করে দিবেন ।

ঈদের রাতের যে সব ফজিলতের কথা বলা হয়েছে এগুলোর মধ্যে কোনটিতে বিশেষ কোনো ইবাদত করার কথা বলা হয়নি। তাই এই রাতে সাধ্যানুসারে নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আযকার, ইস্তিগফার এবং দোয়া-মুনাজাতে মশগুল থাকা কর্তব্য।

বরকতময় এই রাতে অযথা কাজে লিপ্ত হওয়া, বাজারে-মার্কেটে ঘুরাঘুরি করার পরিবর্তে এশা এবং ফজরের নামাজ সময়মত জামাতের সঙ্গে আদায় করা। সঙ্গে অন্যান্য আমলগুলো করা। অন্যান্য আমলগুলো করা সম্ভব না হলেও অন্তত এশা এবং ফজরের নামাজের জামাত ঠিক রাখা। আশা করি যারা ইদের রাত্রিকে কাজে লাগাতে পারবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। এবং আমাদের পাপ্য পারিশ্রমিক দিয়ে দিবেন।

আর যারা এই রাত্রিকে নিজেদের ভোগ বিলাসের জন্য নির্ধারিত করে নেয় আমার মনে হয় না আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তাদেরকে এই ইদের দিন ক্ষমার ঘোষণা করবেন । আল্লাহ আমাদেরকে এই হদের রাতসহ প্রতিটা মুহূর্তকে দ্বীনের কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। 

লেখক: আশিকুর রহমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম